-- ঐদিন এত অপেক্ষা করলাম অথচ তুমি তখন আসলাই না।
-- কৈ? কোনদিন?
-- ঐতো যে রাতে বৃষ্টি পড়ছিলো গুড়ি গুড়ি। বাইরে কেউ ছিলো না। একটা কুকুরও না। সাটার দেয়া সব দোকানের সামনে দিয়ে যখন আসছিলাম তখন কেমন যেন গা ছম ছম করছিলো হঠাত্‍। কিন্তু, যাচ্ছিলাম তো তোমার কাছে। হে হে, ভয়কে কাছে ঘেঁষতেই দিইনি।
-- বাব্বা! এত্ত সাহস আমার পালোয়ানটার?
-- জ্বী ম্যাডাম। আমার সাথে আপনি থাকলে পালোয়ানের বুকের ছাতি এএএএএক হাত বেড়ে যায়। তখন ঘুষি দিয়ে পাথর ভেঙে ফেলতেও দ্বিধা করবো না। হুমম!
-- হয়েছে হয়েছে। থামোতো। এবার সত্যি করে বলোতো, তুমি সত্যি সত্যিই ভয় পাইছিলা না তো মিহির? আম্মা কি বলে জানো! বলে যে কোন সময় ভয় পেলে ঐ ভয়টা না দূর করলে তা নাকি মনে বসে যায়, এরপর বড় রোগ হয়। তাই ছুড়ির আঁগায় একটু লবণ নিয়ে তা চুলার উপর গরম করে খেতে হয়। তাহলে ভয় দূর হয়ে যায়।
-- খাইছে! তুমি এত কিছু কবে শিখলা? আগে তো বলো নাই আমাকে। আচ্ছা খাবোনে তার আগে হাত পাতো। ফুলগুলো নাও। এই যে...
-- ওয়াও! থ্যাংকয়্যূ মিহির। তুমি জানো, তুমি যখন আমাকে হাসনাহেনা ফুল দাও তখন আমার এতও ভালো লাগে! ফুলগুলোর ঘ্রাণ চারপাশে ছড়িয়ে যায় আর আমি প্রত্যেকটা ঘ্রাণের কণায় তোমার ভালোবাসা খুঁজে পাই। তোমার এক একটা ছোট্ট ছোট্ট পাগলামী টের পাই। পাগল একটা... হিহিহি।
-- কি বললা! শোনো, এমনিতেই সবাই আমাকে পাগল বলে, কেউ কেউ আবার ইংরেজীতে সাইকো বলে, ভাবে যে আমি ইংলিশ বুঝি না। মাঝে মাঝে আম্মাও কেমন যেন করে, জানো! সবাই আমাকে নিয়ে অযথাই টেনশন করে। অথচ কেউ বোঝে না যে আমি একদমই ঠিক আছি। ঠিক থাকবই বা না কেন? আমারতো তুমি আছো। আমার ঈশিতা আমার কাছেই থাকে। একদম সামনে বসা। আমি আমার ঈশিতার পারফিউম মিশ্রিত ঘামের ঘ্রাণ পাই। আর সেই তুমি আমাকে পাগল বলতেছো, না? তোমার সাথে কথা নাই!
-- এই এই এই, কি করে আমার মিহির বাবুটা। আমিতো দুষ্টমি করে বলেছিলাম। সরি মিহিইইইর, প্লিইইইইজ, প্লিইইইজ!
-- আচ্ছা আচ্ছা। ঠিক আছে। দিলাম মাফ করে। আর বলবা না তো?
-- উহু। একদম বলবো না। প্রমিজ।
-- এইতো আমার গুড গার্ল। হিহিহি...
-- হ্যাঁ ঠিক আছে। এখন তুমি গুড বয় হয়ে যাওতো। দুপুরের খাবারের সময় হয়েছে। তুমি এখন যাবা, ফ্রেশ হয়ে খেতে বসবা। পেট ভরে খেয়ে একটা ঘুম দিবা। ঠিক আছে?
-- আচ্ছা ঠিক আছে। হিহিহি...

(২)

মিহিরের মা মিসেস রেহানা জামান মিহিরের রুমে আসলেন। ঢুকেই দেখলেন মিহির বেলকনিতে দাঁড়িয়ে হাসছে আর গুন গুন করে কথা বলছে। চোখ থেকে মোটা ফ্রেমের চশমাটা খুলে তিনি মিহিরের কাছে গেলেন। হাত থেকে খেলনা মোবাইলটা নিয়ে রেখে দিলেন। মিহির চুপচাপ বাধ্য ছেলের মত মায়ের নির্দেশ মানতে লাগলো। মিহিরের খাবারের সময় হয়েছে। বিগত দেড় বছর এই একই কাজ করে আসছেন তিনি। প্রতিদিনকার মত
মিহিরকে খেতে দিয়ে তিনি মিহিরের ঘর গোঁছাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। মিহিরের অগোছালো রুমটা পরম মমতায় গোঁছাতে গোঁছাতে হঠাত্‍ মেঝের এক কোণায় অনেকগুলো টুকরো করা কাগজ দেখতে পেলেন। পাগল ছেলের এমন অনেক পাগলামি দেখতে দেখতে অভ্যস্ত তিনি। বিরক্ত না হয়ে কাগজগুলো তুলে ওয়াস্ট বাস্কেটে ফেলার সময় তিনি খেয়াল করলেন প্রত্যকটা কাগজে ছোট ছোট করে কিছু একটা লেখা। মোটা ফ্রেমের চশমাটা আবার চোখে লাগালেন তিনি। কাগজের টুকরোগুলো নিয়ে দেখলেন সেখানে লেখা-


'এই হাসনাহেনা ফুলটা আমার ঈশিতার জন্যে হিহিহি...'